আলোক রশ্মি কী? What's light
আলোক রশ্মি কী? —
"কোন মাধ্যম বা মিডিয়ামের মধ্যদিয়ে আলোক শক্তির পরিভ্রমনকে বলা হয় আলোক রশ্মি"।
আবার অন্যভাবে বলতে গেলে, আলো হচ্ছে এমন একটি মাধ্যম যা আমাদের দর্শনের অনুভূতি জাগায়।আর চোখের ভিতরে প্রবেশকৃত আলোককে ইলেকট্রিক সিগন্যালে পরিবর্তন করে এবং আমাদের মস্তিষ্কে বহন করে,যা প্রক্রিয়াকরণের পর সংকেত আমাদের মনে ছবি তৈরি করে।
আলোর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ইউক্লিড (৩০০ অব্দএ) তার ক্যাটোপট্রিকস বইয়ের মধ্যে বলেছেন আলো সরলরৈখিকভাবে চলাচল করে। গ্রিকরা জানতো আলো কোন দর্পনের মধ্যে প্রতিফলিত হলে, আপাতন কোন আর প্রতিফলন কোনের মান সমান হয়। তারা আরও জানতো আলো এক মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে যেতে পারে।
পরবর্তীতে ফ্রান্সিস বেকন (১২১৫-১২৯৪) এর মধ্যে দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে লেন্সের ব্যবহার এর কথা বলেন । ১২৮০ সালের দিকে সঠিক ভাবে দেখার জন্য একধরনের স্পেকটেকেল লেন্সের ব্যবহার এর কথা চলে আসে। আলোর প্রতিসরন এর সুত্র আলাদা আলাদা ভাবে স্নেল ও রেনো দোকার্ত আবিষ্কার করেন। এরপর বিজ্ঞানী ফার্মেট ১৬৫৮ সালে " আলো এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে গমনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সময়ে অতিক্রান্ত পথই হচ্ছে আলোর প্রকৃত দূরত্ব" এই নীতিটি আবিষ্কার করেন।তার এই নীতির সাহায্যে নূন্যতম সময়ে আলোর মৌলিক ধর্ম - সরলরৈখিকভাবে গমন, প্রতিফলন, প্রতিসরনের সুত্র সমুহ প্রতিষ্ঠা করেন।আর আলোর অপবর্তন এর ঘটনা লক্ষ্য করেন আর এক বিজ্ঞানী গ্রিমালডি। ১৬৬৭ সালে নিউটন আলোর সাতটি বর্ণ নিয়ে গঠিত এটি প্রতিষ্ঠা তিনি করেন। ডাবল রিফ্রাকশন এর ঘটনা আবিষ্কার করেন বার্থোলিনিয়াস ১৬৭০ সালে।১৬৭৫ সালের দিকে নিউটন আলোর কনা তত্ত্ব সূত্রটি সামনে রাখেন।এই সূত্রটি আলো সরলরৈখিকভাবে চলাচল করে এটি ব্যাখা করা যায় এবং কোন প্রতিবন্ধকতা থাকলে ছায়া তৈরি করে।কিন্তু এটা ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে কেন ক্রমাগত কণার ক্ষয় ও ওজন কমানোর জন্য আলোর উৎস সৃষ্টি করে না। যাইহোক এই সূত্রটি আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরন সুত্র প্রমান করতে পারেন।আর অপবর্তন এর ঘটনা এবং নিউটন রিং কনাতত্ত্ব সুত্র দিয়ে ব্যাখা করতে পারে না।
১৬৭৬ সালের দিকে রোমার প্রমান করেন আলো একটা নির্দিষ্ট বেগে পরিভ্রমণ করে। নিউটনের সমসাময়িক সময়ে এর মধ্যে আবার হাইগেন ১৬৭৮ সালের দিকে আলোর তরঙ্গ তত্ত্ব প্রস্তাব করেন।তার তত্ত্ব মতে আলো এক বিন্দু থেকে অপর বিন্দুতে গমনের ক্ষেত্রে তরঙ্গ গঠেনের মধ্য দিয়ে যায়।সেই সময়ে হাইগেন আলোর প্রতিফলন ও প্রতিসরন এর সাধারণ সুত্র প্রমান করেন। তিনি দাবি করেন আলো হালকা মাধ্যমে থেকে ঘন মাধ্যমে যেতে এর বেগ কম হয়ে থাকে। এছাড়াও আলোর দুই ধরনের তরঙ্গের তিনি ডাবল রিফ্রাকশন এর ঘটনা ব্যাখা করেন।
এরপর আলোর ব্যতিচার এর ঘটনাটি ১৮০৩ সালের দিকে থমাস ইংক সামনে নিয়ে আসেন। তিনি আলোর তরঙ্গ তত্ত্বকে সমর্থন করেন। ১৮০৮ সালের দিকে বিজ্ঞানী মালুস আলোর পোলারায়ন ধর্ম আবিষ্কার করেন। পরবর্তীতে হাইগেন,ইংক এবং স্নেল উভয় মিলে মনে করেন আলো অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ। কিন্তু এই আলোর অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ তত্ত্বটি আলোর পোলারায়ন ধর্ম ব্যাখা করতে পারে না। অবশেষে ইংঙ্ক অনুধাবন করতে পারেন আলো হচ্ছে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ।১৮৫০ সালের দিকে আবার বিজ্ঞানী ফাউকাল্ট প্রতিষ্ঠা করেন আলো বেগ বায়ু মাধ্যম থেকে পানি মাধ্যমে অনেক কম হয়ে যায়। এটা কেবল মাত্র নিউটনের সুত্রের বিপরীত দাবি।
এতো কিছুর পর অবশেষে আলোর তরঙ্গ তত্ত্ব গৃহীত হয়।আর বেগ 3× 10⁸ ms⁻¹
আলোর প্রকৃতি ব্যাখ্যায় অর্থাৎ আলো কিভাবে এক স্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয় তা উদঘটনের জন্য আলোর চারটি গুরুত্বপূর্ণ সুত্র আবিষ্কৃত হয়-
১. কনিকা তত্ত্ব
২. তরঙ্গ তত্ত্ব
৩. তড়িৎ চৌম্বকীয় তত্ত্ব এবং
৪. কোয়ান্টাম তত্ত্ব।
১.কনিকা তত্ত্ব:-
এই তত্ত্বের প্রবর্তক বিজ্ঞানী নিউটন। এই সুত্রের সাহায্যে আলো সরলরৈখিকভাবে চলাচল করে, প্রতিফলন ও প্রতিসরন ব্যাখা করা যায়। ব্যাখা করতে পারে না ব্যতিচার, অপবর্তন এবং পোলারায়ন।
২. তরঙ্গ তত্ত্ব:-
১৬৭৯ সালে ক্রিস্টিয়ান হাইগেন আলোর তরঙ্গ তত্ত্ব সুত্র প্রস্তাব করেন। হাইগেন অনুমান করেছিলেন আলোর প্রত্যেকটা কনিকা তার গমনের দিকের সাথে সমান্তরালে অগ্রসর হয়, এজন্য তিনি দাবি করেছিলেন আলো অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ। পরবর্তীতে এটি ভুল প্রমাণিত হয়। তিনি অনুধাবন করতে পারেন আলো অনুদৈর্ঘ্য তরঙ্গ না, এটা হচ্ছে অনুপ্রস্থ তরঙ্গ যা কম্পনের দিকের সাথে লম্বভাবে অগ্রসর হয়।
তার সুত্রের সাহায্যে আলোর - প্রতিফলন, প্রতিসরন, অপবর্তন এবং ব্যতিচার ব্যাখা করা যায় কিন্তু পোলারায়ন বা সমবর্তন, কম্পটন ক্রিয়া ও আলোক বা ফটো - তড়িৎক্রিয়া ব্যাখা করা যায় না।
৩. তড়িৎ চৌম্বকীয় তত্ত্ব:-
বিজ্ঞানী ম্যাক্সওয়েল তাড়িৎ চৌম্বকীয় তত্ত্ব সামনে নিয়ে আসেন। আর দেখান তাড়িৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ আলোর দ্রুতিতে পরিভ্রমণ করে। পরবর্তীতে হেনরি হার্জ এটি পরীক্ষামূলক ভাবে প্রমান করেন।
আর এর পরিভ্রমনের দিকটাকে অ্যারো চিহ্নিত সরল রেখা দ্বারা প্রকাশ করে থাকি
—
আরো পড়ুন: কোনো বস্তুর বেগ ১.৫গুন করা হলে এর গতিশক্তির পরিবতন কত হবে?