শক্তি কী? শক্তির প্রকারভেদ। যান্ত্রিক শক্তি এর বিভব শক্তি ও গতিশক্তি
শক্তি কী? শক্তির প্রকারভেদ। যান্ত্রিক শক্তি এর বিভব শক্তি ও গতিশক্তি
শক্তি কী?
অনেকেই হয়তো জানি, কোন বস্তুর কাজ করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে। শক্তির সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই, এটা শুধুমাত্র এক রুপ থেকে অন্য রুপে রুপান্তরিত হতে পারে। কোন বস্তু বা ব্যবস্থা যে পরিমাণ কাজ করতে সক্ষম, তা দিয়ে এর শক্তি নির্ণয় করা হয়। আর কোন বস্তু বা ব্যবস্থা যে সকল কারণে শক্তির অধিকারী হয়।
কারন গুলো -
১. গতির কারনে হতে পারে
২. অবস্থানগত কারণে
৩. অবস্থানের পরিবর্তন এর কারনে এবং
৪ পরিবেশ জনিত কারণে
এই সকল কারণে একটি বস্তু বা ব্যবস্থা শক্তির অধিকারী হয়।
শক্তির প্রভাবে বস্তু কাজ করার সামর্থ্য অর্জন করে। কাজ ও শক্তির পরিমাপ ও মাত্রা একই।
শক্তির মাত্রা: শক্তির মাত্রা= কাজের মাত্রা
= [ ML²T⁻²]
শক্তির একক: জুল (J)
আরো বিভিন্ন একক বিদ্যমান যে গুলোকে পরম একক বলে যেমন -
আর্গ (erg), ফুট পাউন্ডাল (ft - poundal), জুল।
অভিকর্ষ একক -
Kg-m, gm-cm, ft-lb
শক্তির ব্যবহারিক একক হচ্ছে জুল।
শক্তির প্রকারভেদ -
১. যান্ত্রিক শক্তি
২. তাপ শক্তি
৩. শব্দ শক্তি
৪. বিদ্যুৎ শক্তি
৫. চম্বুক শক্তি
৬. আলোক শক্তি
৭. পারমাণবিক শক্তি
৮. সৌর শক্তি
৯. রাসায়নিক শক্তি।
আমরা এখানে শুধুমাত্র যান্ত্রিক শক্তি নিয়ে আলোচনা করব।
যান্ত্রিক শক্তি:
কোন বস্তু বা ব্যবস্থা তার অবস্থানের( গতি বা স্থিতি) এর জন্য কাজ করার যে সামর্থ্য অর্জন করে তাকে যান্ত্রিক শক্তি বলে।যান্ত্রিক শক্তি দুই ভাগে ভাগ করা হয় -
১. বিভব শক্তি ও
২. গতি শক্তি।
বিভব শক্তি:
কোন বস্তু বা ব্যবস্থা স্থির থাকার ফলে কাজ করার যে সামর্থ্য অর্জন করে অথবা যে পরিমাণ শক্তি সঞ্চয় করে তাকে বিভব শক্তি বলে।
বিভবশক্তি সহজে অন্যান্য শক্তিতে রূপান্তরিত হতে পারে। যেমন- একটি বোমা বিস্ফোরিত হলে এর বিভবশক্তি শব্দ ও তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি একটি বস্তুকে এক স্থিতিশীল জায়গা হতে অন্য কোন স্থিতিশীল অবস্থায় বা জায়গায় নিতে যে পরিমাণ কাজ করতে হয় ওই পরিমাণ কাজেই হচ্ছে বস্তুর বিভব শক্তির পরিমাপ। বিভব শক্তিকে U দ্বারা প্রকাশ করা হয়-
![]() |
চিত্র: h উচ্চতায় কোন বস্তুর বিভব শক্তি। |
ধরা যাক, m ভরের কোন বস্তুকে h উচ্চতায় উপরে তুলতে ক্রিয়ারত অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে বস্তুর যে পরিমাণ কাজ সম্পাদন হয় তা বিভবশক্তির সমান অর্থাৎ বস্তুর কৃত কাজ বিভব শক্তির সমান।
U= w
=F h
= mgh
∴ U = mgh
বিভব শক্তির উচ্চতা দেয়া না থাকলে সেটা বের করতে হবে -
১. h=ut+/- 1/2gt²
২. v²=u²+/- 2gh
তাহলে দাঁড়াবে -
১. U= mg(ut+/- 1/2gt²)[ কত বেগে(বলতে আদিবেগ)কত সময়ে বস্তুকে নিক্ষেপ করা হলো বা উপর থেকে ফেলে দেওয়া হলো তাহলে হবে এই সমীকরণ]
২. U=mg(v²-u²)/2g[বেগ উল্লেখ করা থাকলে এই সমীকরণ]
স্প্রিং এর জন্য বিভব শক্তি
U= 1/2kx²=1/2Fx=mgx
এখানে x হলো স্প্রিং ধ্রুবক এবং m হলো স্প্রিং এর ভর।
গতিশক্তি:
কোন বস্তু বা ব্যবস্থা গতিশীল থাকার কারণে কাজ করা যে সামর্থ্য লাভ করে তাকে গতিশক্তি বলে। একে K দ্বারা প্রকাশ করা হয়। সুতরাং বলা যায় গতিশক্তি কৃতকাজের সমান।
তাহলে, k= w
K= mas
=m(v²/2)[as=v²/2]
=1/2mv²
বস্তুর ভর m ধ্রুবক হলে হলে-
K∝v²
অর্থাৎ গতিশক্তি বেগের বর্গের সমানুপাতিক। কোন বস্তুর বেগ দ্বিগুণ করলে গতিশক্তি হবে চার গুণ। গতিশক্তি বস্তুর ভর ও বেগ উপর নির্ভরশীল।
এখন গতিশক্তি বের করতে হলে বেগ দেওয়া না থাকলে-
১. V²= u²+/-2gh[উচ্চতা দেওয়া থাকলে এই সমীকরণ হবে]
২. v= u+/-gt[সময় দোয়া থাকলে এই সমীকরণ হবে
কত উচ্চতায় গতিশক্তি বিভব শক্তির সমান হবে উল্লেখ থাকলে -
বি:দ্র: প্রশ্নে উচ্চতা দেওয়া থাকলে
![]() |
চিত্র: কোথায় গতিশক্তি বিভবশক্তির সমান হবে। |
ধরি , x উচ্চতায় গতিশক্তি বিভব শক্তির সমান হবে।
গতিশক্তি,k =1/2mv²
বেগ বের করার জন্য, v²=2gh(এখানে আদিবেগ শুন্য থাকতে পারে আবার দেয়া থাকতে পারে)
তাহলে,k =1/2mv²=1/2m.2gh=mgh
=mg(h-x) ................................(1)
বিভব শক্তি, u= mgh
= mgx ...................................(2)
এখানে x উচ্চতা সব সময় ভুমির সাথে নিতে হবে এবং বিভবশক্তির সাথে রাখতে হবে।
প্রশ্নমতে,
K=U
=> mg(h-x) =mgx
=> h-x= x
=> 2x= h
∴ x=h/2
বি:দ্র: যার সাথে 'র' থাকবে তার সাথে অর্ধেক গুণ হবে। এখানে বিভবশক্তির সাথে র আছে তাই অর্ধেক বা হাফ (১/২) বিভবশক্তির সাথে গুন হবে।
কত উচ্চতায় গতিশক্তি বিভবশক্তির অর্ধেক হবে
গতিশক্তি,k =1/2mv²= 1/2m.2gh=mg(h-x).......(1)
বিভবশক্তি,u= mgh
= mgx ...................................(2)
এখানে x উচ্চতা সব সময় ভুমির সাথে নিতে হবে এবং বিভবশক্তির সাথে গুন করতে হবে। বস্তুকে নিক্ষেপ করা হোক বা উপর থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হোক এটা কোন বিষয় না। সেটা ভুমির সাথে নিতে হবে।
প্রশ্নমতে,
K= 1/2U
=> mg(h-x)=1/2 mgx
=> h-x=1/2x
=> 3/2x= h
∴x= 2h/3
ঘূর্ণায়মন বস্তুর গতিশক্তি:
কোন বস্তুর উপর প্রযুক্ত টর্ক τ প্রয়োগ করায় নির্দিষ্ট অক্ষের সাপেক্ষে কোন বস্তুর ঘূর্নণ সৃষ্টি হলে। এর কৌনিক সরন θₒ থেকে θ এবং কৌণিক বেগ শুন্য থেকে ω হলে কৃতকাজ হবে তার গতিশক্তির সমান।
W=K= 1/2Iω²
আবার, I = mr²
চলন- ঘূর্গনণ গতিসম্পন্ন বস্তুর গতিশক্তি:
চরম ঘূর্ণন গতিসম্পন্ন বস্তুর গতিশক্তির দুটি অংশ থাকে
১. একটি চলন গতির জন্য
২. অপরটি ঘূর্ণন গতির জন্য।
সুতরাং চলন ঘূর্নণ গতিসম্পন্ন বস্তুর গতিশক্তি-
K= 1/2MV²ₘ +1/2Iω²
এখানে, Vₘ= ভরকেন্দ্রের বেগ= ωr (সবসময় ωr নাও হতে পারে যদি বৃত্তাকার চাকা বা বস্তু হলে ωr হবে )
এবং I = mr²
কাজ শক্তি উপপাদ্য:
কোন বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল দ্বারা কৃত কাজ বস্তুর গতিশক্তির পরিবর্তনের সমান, এটা কাজ শক্তি উপাদান নামে পরিচিত।
তাহলে কৃতকাজ W=Kₚ - Kᵢ =Δk
এখানে, Kₚ= 1/2mvₚ² এবং
Kᵢ= 1/2mvᵢ²
গতিশক্তি এবং ভরবেগের সম্পর্ক:
ভরবেগ, p= mv হলে
গতিশক্তি, K =1/2mv²=1/2(mv)²/m=p²/2m
∴ k=p²/2m
শক্তি, বিভবশক্তি, যান্ত্রিকশক্তি এবং গতিশক্তির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
গতিশক্তি কি ঋণাত্মক হতে পারে?
যেহেতু বস্তুর গতিশীলতার কারণে গতিশক্তি প্রাপ্ত হয়। আর বস্তুর ভর কখনো ঋণাত্মক হতে পারে না । কিন্তু বস্তুর বেগ ধনাত্মক বা ঋণাত্মক দুটোই হতে পারে। আর বেগের বর্গ সব সময় ধনাত্মক হয়। তাহলে বলা যায় গতিশক্তি কখনো হতে পারে না।
বিভব শক্তি ধনাত্মক বা শূন্য হতে পারে কি?
ভূপৃষ্ঠে কোন বস্তুর বিভব শক্তি শূন্য হয়। এই বস্তুকে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরে তুললে অভিকর্ষ বলের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়। আর বাহ্যিক বল দ্বারা কৃতকাজ ঋণাত্মক হলেও বস্তুর মধ্যে সঞ্চিত শক্তির বিভব শক্তি হবে ধনাত্মক। অন্যদিকে বস্তুকে নিচের দিকে নামালে অভিকর্ষের দিকে বস্তুকে কাজ করতে হয়। হলে বস্তুর উপর কৃত কাজ ধনাত্মক এবং বস্তুর মধ্যে সঞ্চিত শক্তি বা বিভব শক্তি ঋণাত্মক। বলা যায় বিভব শক্তি ধনাত্মক শূন্য দুই হতে পারে।
আরো পড়ুন: কাজ কাকে বলে ও কাজের প্রকারভেদ।
আরো পড়ুন: শক্তির সংরক্ষণ সুত্র। যান্ত্রিক শক্তির নিত্যতা সুত্র।