ট্রানজিস্টর
ট্রানজিস্টর কাকে বলে?ট্রানজিস্টর কিভাবে কাজ করে,ট্রানজিস্টর এর ব্যবহার,ট্রানজিস্টর নামের উৎপত্তি আলোচনা করা হয়েছে -
ট্রানজিস্টর একধরণের ইলেক্ট্রনিক কামপোনেন্ট বা পাওয়ার ডিভাইস যা একটি ইনপুট সিগনালের উপর নির্ভর করে একটি আউটপুট সিগনাল তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
ট্রানজিস্টর হলো একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র যা বিদ্যুৎ সংকেত বা প্রবাহ বৃদ্ধি এবং সুইচিং করতে ব্যবহার করা হয়।
অন্যভাবে বলতে গেলে ট্রানজিস্টর একটি লো সিগন্যালকে হাই সিগন্যালে পরিনত করে অর্থাৎ আউটপুট হিসেবে বিবর্ধিত সংকেত পাওয়া যায়।
ট্রানজিস্টর নামের উৎপত্তি-
একটি ট্রানজিস্টরের দুটি pn জাংশন থাকে। একটি জংশন ফরোয়ার্ড বায়াসড এবং অন্য জংশন বিপরীত বায়াসে। ফরোয়ার্ড বায়াসড জংশনের একটি কম প্রতিরোধের( low resistance path) পথ থাকে যেখানে একটি বিপরীত বায়াস জংশনের একটি উচ্চ প্রতিরোধের পথ( high resistance path) থাকে। দুর্বল সংকেত কম প্রতিরোধের সার্কিটে চালু করা হয় এবং আউটপুট উচ্চ প্রতিরোধের সার্কিট থেকে নেওয়া হয়। সুতরাং, ট্রানজিস্টর একটি কম প্রতিরোধের থেকে উচ্চ প্রতিরোধে(low resistance to high resistance) একটি সংকেত স্থানান্তর করে। প্রিফিক্স ট্রান্স (tena) মানে ডিভাইসের সিগন্যাল ট্রান্সফার প্রপার্টি আর ইস্টর (ostir) অর্থ এটিকে রেজিস্টরের সাথে একই সাধারণ ফ্যামিলে একটি কঠিন উপাদান হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করে।
ট্রানজিস্টরের প্রধান কাজ হলো প্রবাহ বৃদ্ধি এবং নিয়ন্ত্রণ করা। সাধারণত এর তিনটি মুখ্য উপাদান থাকে -
১. এমিটার (Emitter), বা নিঃসারক
২. কালেক্টর (Collector), সংগ্রাহক
৩. বেস (Base) বা ভূমি।
নিঃসারক বা ইমিটার
ট্রানজিস্টর যে অংশ আধান সরবরাহ করে তাকে নিঃসারক বা এমিটার বলে। এমিটার ও বেজ সর্বদা সম্মুখ ফরোয়ার্ড বায়াস থাকে।
ইমিটার সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য -
• এটি বেশি মাত্রায় ডোপিং করা থাকে
• এর প্রধান কাজ হলো বেসে চার্জ বাহক ( ইলেকট্রন বা হোল) সরবারহ করা।
• এটি হতে প্রচুর সংখ্যক সংখ্যাগুরু চার্জ বাহক সরবরাহ হতে পারে
• এটি বেসের চেয়ে পুরু হয়ে থাকে
• pnp ট্রানজিস্টর ইমিটারের সাথে ফরওয়ার্ড বায়াসে যুক্ত থাকলে এটি জাংশনের বেসের মধ্যে হোল চার্জ সরবারহ করে থাকে
• npn ট্রানজিস্টর এর সাথে ইমিটার যদি ফরওয়ার্ড বায়াসে যুক্ত থাকে তাহলে বেসের মধ্যে মুক্ত ইলেকট্রন সরবরাহ করে।
সংগ্রাহক বা কালেক্টর
ট্রানজিস্টরের যে অংশ আধান সংগ্রহ করে তাকে সংগ্রহাক বা কালেক্টর বলে। সংগ্রহাক বা কালেক্টর বেস এর সাথে বিপরীত বায়াস বা ঝোঁকে থাকে।
কালেক্টর সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য -
• অধিকাংশ ট্রানজিস্টরে কালেক্টর অংশ ইমিটারের তুলনায় বড় হয়
• এটি বেসের সাথে সর্বদা রিভার্স ভাবে বায়াসিত থাকে
• এর কাজ হল বেস সংলগ্ন চার্জ বাহক গুলো কে সরিয়ে নেওয়াঊ
• pnp ট্রানজিস্টর কালেক্টর এর সাথে বিপরীত বায়াসে যুক্ত থাকে এবং কালেক্টর হোল গ্রহন করে এবং npn ট্রানজিস্টরে কালেক্টর যা ইলেকট্রন গ্রহন করে এবং বিপরীত বায়াসে যুক্ত থাকে।
ভূমি বা বেজ
এটি কালেক্টর এবং এমিটার এর মাঝে থাকে। ইমিটরকে সম্মুখ ঝোক প্রদান করে যাতে এমিটার বর্তনীর রোধ কম হয়। আর কালেক্টর বর্তনীর রোধ বৃদ্ধি করার জন্য কালেক্টরের সাথে বিমুখী ঝোঁক প্রদান করা হয়।
ট্রানজিস্টর কিভাবে কাজ করে-
ট্রানজিস্টর কে কাজ করার জন্য এক জাংশনে সম্মুখ ঝোক এবং অপর জাংশনে বিমুখী ঝোঁক করে নেওয়া হয়। ফলে p অঞ্চল (ইমিটার) থেকে হোল বেজের মধ্যে প্রবেশ করে এবং সংগ্রাহক বেশী ঋণাত্মক হওয়ায় হোলগুলো বেজ থেকে তীব্রভাবে সংগ্রাহক এর দিকে ছুটে যায় এবং প্রচুর তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি করে। p অঞ্চল বা ইমিটার সম্মুখ ঝোকের কারণে হোল গুলো বেজের দিকে প্রবাহিত হয়ে ইমিটার প্রবাহ Ie তৈরি করে। অপরদিকে হোলগুলো n অঞ্চল বা বেজের সাথে ইলেকট্রন গুলোর সাথে মিশতে চায়। বেজ মাত্র ৫% ইলেকট্রন এর সাথে মিশে বেজ প্রবাহ IB তৈরি করে। অবশিষ্ট ৯৫% p অঞ্চলের সংগ্রাহকে প্রবেশ করে Ic কারেন্ট তৈরি করে এভাবে ইমিটারের কারেন্ট বেজ ও সংগ্রাহকে আলাদা প্রবাহ সৃষ্টি করে।
ট্রানজিস্টর এর ব্যবহার
১। আইসিতে(IC) আমরা ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে লজিক গেইট নির্মাণ করি। লজিক গেইট হল এমন একটি উপাদান যা ইনপুট এবং আউটপুট সিগনাল ব্যবহার করে, এবং ট্রানজিস্টর একটি অতিরিক্ত উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
২। পাওয়ার সাপ্লাইয়ে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে পাওয়ার সাপ্লাই নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
৩। অ্যাম্পলিফায়ারে ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে ভোল্টেজ বা কারেন্ট বাড়াতে পারি।
এছাড়াও
ইলেকট্রনিক সুইচিং যেমন ডিজিটাল লজিক গেইট, মাইক্রোপ্রসেসর এবং কম্পিউটারের মৌলিক উপাদান ।
অ্যাম্পলিফিকেশন যেমন:
অডিও অ্যাম্পলিফার, ভিডিও অ্যাম্পলিফার, রেডিও অথবা টেলিভিশন রিসিভার ইত্যাদি।
ওসিলেটর,মেমোরি সেল, ডিজিটাল লজিক গেইট, রেগুলেটর সার্কিট, সোলার সেল, ফটোডায়োড, ইত্যাদি।